Thursday, 1 June 2023

সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং - কি এবং এর বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং এর উপকারিতা



মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং হল এক ধরনের থেরাপি যা বিভিন্ন মানসিক  সমস্যা সমাধানের জন্য বা জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য একজন যোগ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রয়োগ করা হয়  ।  এটি আপনাকে মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার প্রচার করতে, নিজেকে বুঝতে এবং বিভিন্ন উদ্বেগ জনিত সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে।  কিছু সমস্যা যা মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং সাহায্য করতে পারে তা হল উদ্বেগজনিত ব্যাধি ( Anxiety disorder ), Mood Disorder , আসক্তি ( Addiction), Eating Disorder , ব্যক্তিত্বের ব্যাধি ( Personality Disorder ), সিজোফ্রেনিয়া, স্ট্রেস, ট্রমা, শোক, সম্পর্কের সমস্যা, যৌন সমস্যা ইত্যাদি ৷  মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে পৃথকভাবে বা দলগতভাবে করা যেতে পারে।  প্রয়োজনে এটি ওষুধ বা অন্যান্য চিকিত্সার সাথেও মিলিত ভাবে করা যেতে পারে।


মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং হল এক ধরনের থেরাপি যা উদ্বেগজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাদের উপসর্গগুলি মোকাবেলা করতে এবং তাদের ভয় ও উদ্বেগগুলি মোকাবিলা করার জন্য কৌশল তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।

 Psychological Counseling এর বিভিন্ন প্রকারভেদ -

Cognitive Behaviour Therapy (CBT): এটি এমন এক ধরনের থেরাপি যা মানুষকে উদ্বেগ সৃষ্টি করে এমন নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আচরণগুলি সনাক্ত করতে এবং চ্যালেঞ্জ করতে সহায়তা করে।  CBT মানুষকে কীভাবে relax করতে হয়, তাদের ভয়ের মুখোমুখি হতে হয় এবং stress জনিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শেখায়।


 Exposure Therapy -  এই থেরাপির লক্ষ্য হল মানুষকে ধীরে ধীরে তাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা এবং তাদের বিভিন্ন অশোভন আচরণ কমাতে সাহায্য করা। এই থেরাপির সাহায্যে নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মানুষকে এমন পরিস্থিতি বা বস্তুর কাছে নিয়ে আসা হয় যা তাদের উদ্বেগ তৈরী করে।


Acceptance & Commitment Therapy (ACT): এটি এমন এক ধরনের থেরাপি যা মানুষকে তাদের উদ্বেগকে জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে এবং তাদের মূল্যবোধ ও লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।  ACT মানুষকে উদ্বেগ মোকাবেলা করার জন্য কীভাবে Mindfullness Skills ব্যবহার করতে হয় তা শেখায়।


Other Types Of Psychotherapy - ব্যক্তির চাহিদা এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে, অন্য ধরনের সাইকোথেরাপি  anxiety চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন  Interpersonal থেরাপি, সাইকোডাইনামিক থেরাপি, বা Supportive থেরাপি।



রুগীর বা ক্লায়েন্ট এর ক্লিনিকাল অবস্থার উপর নির্ভর করে মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং পৃথকভাবে বা গ্রুপ এ  করা যেতে পারে।  কাউন্সেলিংকে ওষুধ বা উদ্বেগের জন্য ব্যাবহিত অন্যান্য চিকিত্সার সাথেও একত্রিত করা যেতে পারে, যেমন  relaxation technique, ব্যায়াম ইত্যাদি।।


গবেষণায় দেখা গেছে যে মানসিক কাউন্সেলিং বিভিন্ন ধরণের উদ্বেগজনিত ব্যাধিগুলির চিকিত্সার জন্য কার্যকর হতে পারে, যেমন সাধারণ উদ্বেগজনিত ব্যাধি ( Generalized Anxiety Disorder ), প্যানিক ডিসঅর্ডার, সামাজিক উদ্বেগজনিত ব্যাধি ( Social Anxiety Disorder ) , ভয় বা ভীতি ( Phobia ), OCD - Obsessive-compulsive Disorder এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার।  কাউন্সেলিং উদ্বেগের লক্ষণগুলি কমাতে, মেজাজ এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে, জীবনের মান উন্নত ( quality of life ) করতে এবং পুনরায় রোগ সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করতে পারে।


আপনি যদি উদ্বেগের ( Anxiety ) জন্য মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিংয়ে ( Psychological Counseling ) আগ্রহী হন, আপনি তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ( Psychiatrist/ Psychological Counselor etc) এর সাথে পরামর্শ করতে পারেন। 






Sunday, 23 June 2019

আপনার শিশু কি মোবাইল দেখতে দেখতে খায় ? কতটা ক্ষতিকর জেনে নিন

                                 
                           এই আধুনিক যুগে আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য সঙ্গী হলো মোবাইল ফোন । অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র যেটা ছাড়া আমরা আমাদের জীবন ভাবতেও পারিনা । স্মার্টফোন মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট কানেকশন আজকে চাইই চাই।
                            এর অনেকগুলি কাজের মধ্যে আরেকটি কাজ নতুন সংযোজন হয়েছে শিশুকে ভুলিয়ে রাখা । 1-2 বছরের বাচ্ছার হাতেও মোবাইল ফোন বা ট্যাব ।  স্মার্ট ফোনের যুগে শিশুরাও যেমন স্মার্ট তাদের মায়েরাও আরো বেশি স্মার্ট। বাচ্ছা খেতে চাইছে না , খেতে খেতে ঘ্যান ঘ্যান করছে - দাওয়াই হাতের সামনেই আছে - মোবাইল বা ট্যাব । চালিয়ে দাও কার্টুন , শিশুদের গান বা শিশুদের জন্যে তৈরী ভিডিও ক্লিপিংস - ব্যাস কেল্লা ফতে ।  বাচ্ছা হা করে খাবার খাচ্ছে বটে কিন্তু মন দিয়ে গিলছে ওই মোবাইল নামক বস্তুর থেকে প্রাপ্ত entertainment ।  যাই হোক বাবা মা খুশি , বাড়ির সবাই খুশি - আমার বাচ্ছা সব খেয়ে নেয়; শুধু মোবাইল এ ভিডিও চালিয়ে দিতে হবে ।
                              সত্যিই কি খুব খুশির খবর এটা। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু অন্য কথা বলছে । খেতে খেতে মোবাইল দেখার অভ্যাস যথেষ্ট ক্ষতিকারক । প্রাথমিক ভাবে হয়তো শিশু খাবার খেয়ে নিচ্ছে , কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই ।

খেতে খেতে মোবাইল এর অভ্যাস শিশুদের কি কি ক্ষতি করছে এবং এর সম্ভাব্য প্রতিকার :-

1. ছোট শিশুদের কাছে খাবার খাওয়া একটি নতুন অভিজ্ঞতা । নতুন নতুন খাবার এর সাথে শিশুর পরিচয় হওয়া , খাবার স্বাদ গ্রহণ করা এগুলি সব ই শিশু ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখে । কিন্তু মোবাইল দেখিয়ে খাওয়ালে শিশুর সমস্ত মনোযোগ থাকে সেই দিকে খাবার এর দিকে নয় । ফলে খাবারের সাথে শিশুর সংযোগ - ঘনিষ্ঠতা - ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যায় । মোবাইল দেখার নেশায় সে যন্ত্রের মতন শুধু খাবার খায় , আত্মস্থ করে না।

2. মোবাইল দেখলে তবে খাবে নাহলে বাচ্ছা খাবার খাবেই না । এর অর্থ সে মোবাইল এর সাথে Conditioning হয়ে গেছে । ফলে যখন মোবাইল দেখানো হবে না সে খেতেই চাইবে না ।

3. মোবাইল এ শিশু যা দেখে তার একটি আসক্তিমূলক উপাদান বা addictive component আছে , যা শিশুকে মোবাইল নির্ভরশীল করে তুলছে ।

4. শিশু বড় হবার সাথে যত বেশি করে বাইরের পরিবেশের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখবে ততই তার বিকাশ ভালো হবে । কিন্তু external world এর সাথে যত  সম্পর্ক কমবে তার মস্তিস্ক কম বিকশিত হবে এবং শিশুর Physical ও Psychological  বৃদ্ধির ও ব্যাঘাত ঘটবে । খেতে খেতে যে মোবাইল এর আসক্তি জন্মাচ্ছে সেটির ফলে শিশুর external connection যেমন খেলাধুলা বন্ধ হলে উপরের সমস্যা গুলিও হতে পারে ।

5. 1-2 বছরের শিশুর মোবাইল দেখিয়ে খাবার অভ্যাস আস্তে আস্তে 4-5 বছরের শিশুর আসক্তিতে পরিণত হবে । মোবাইল এর প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়বে । ফলে শিশুর normal growth & skill এর ব্যাঘাত ঘটবে যেমন - শিশু খেলাধুলা , বই পড়া , বন্ধু তৈরী করা , সামাজিক মেলামেশা ইত্যাদি করতে পারবে না । বয়ঃসন্ধিক্ষণে এই আসক্তি আরো বাড়বে । শিশুর Social Skill একদম নষ্ট হয়ে যাবে ।
                       একটু বাচ্ছা যখন বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে তখন সে বাইরের পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়। অন্য বাচ্ছাদের সাথে খেলা , মেশা , ঝগড়া করা , বন্ধুত্ব করা ইত্যাদির মাধ্যমেই গড়ে ওঠে Social Skill , Problem Solving Ability ইত্যাদি। কিভাবে অন্য মানুষের সাথে সংযোগ করবো , কিভাবে কথা বলবো , কিভাবে ছোট ছোট সমস্যা নিজে বা বন্ধুদের সাথে মিলে সমাধান করবো , কিভাবে Peer group তৈরী করবো  ইত্যাদি skill গুলি আমাদের শিখতে হয় এবং এই সব শেখার প্রাথমিক ধাপ শুরু হয় শিশু বয়স থেকেই । তাই Social Skill বা সামাজিক দক্ষতা তখন ই বাড়বে বা তৈরী হবে যখন শিশু ছোট থেকেই বাইরের পরিবেশের সাথে একাত্ম হবে ।

6. মোবাইল এ ভিডিও দেখা বা গেম খেলার সব কিছুতেই Repeat option আছে। অর্থে বারে বারে ওই এক ই কাজ করা যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই সুযোগ থাকেনা , বাস্তব জীবনে খেলাধুলাতেও challenges বেশি। তাই শিশুর কাছে মোবাইল অনেক সহজ বোধ হয় খেলাধুলার তুলনায় । এর ফলে শিশুর মানসিক বোধশক্তি সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং বাড়তে পারে না ।
                               

7. Failure is the Piller of Life . মোবাইল এর জগতে ফেল হলেও খুব সহজেই আবার পাস করা যায় কিন্তু বাস্তব জীবনে যা খুব সহজ নয় । ফলে বাস্তবে fail হলে শিশু সেটা কাটিয়ে উঠতে পারে না ।

8. বহির্জগতের প্রতি যত সম্পর্ক কমবে শিশুর সামাজিক বৃদ্ধি , Emotional Intelligence ততই কমবে ।

9. খাবার খাওয়াই বাচ্ছার কাছে একটি entertainment বা আনন্দের কাজ । এটাকে সে উপভোগ করতে করতেই শিখতে পারে । প্রতিটি খাবার এর স্বাদ , তার রং , গন্ধ , মুখে দিলে কেমন লাগছে - এগুলি শিশু ধীরে ধীরে আত্মস্থ করে । এই আত্মস্থ করার মধ্যেও শেখার আনন্দ থাকে । এইভাবে প্রতিটি খাবার এর সাথে শিশুর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে । কিন্তু মোবাইল দেখতে দেখতে খেলে তার মনোযোগ পুরো পুরি খাবার থেকে সরে যায় ।  তাই খাবার এর সাথে আর শিশুর সম্পর্ক আর গড়ে ওঠে না ।

10. মোবাইল দেখেই হোক বাচ্ছা তো খাচ্ছে । তাই পুষ্টি তো পাচ্ছে । কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে সব কিছুই আমাদের মনের সাথে সম্পর্ক যুক্ত । তাই মোবাইল দেখে খাওয়ার একটি নেতিবাচক মানসিক প্রভাব থাকবেই যা শিশুর পুষ্টিতে প্রভাব ফেলতে বাধ্য ।

                                  শিশু সব কিছুই শেখে তার জন্মের পর । আমরা তাকে যা শেখাবো , সেটাই সে শিখবে । তাই আমরা তাকে কিভাবে শেখাচ্ছি সেটা খুব  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মোবাইল আসার আগেও শিশুরা খেতে চাইতো না এবং ঘ্যান ঘ্যান করতো ; তখন ও বাবা মা এরা শিশুকে কবিতা বলে , গান শুনিয়ে , বাগান এ ঘুরিয়ে , ফুল দেখতে দেখতে নানান ভাবে ভুলিয়ে খাওয়াতো ; যার কোনো সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব থাকতো না । মোবাইল ব্যবহার না করে দেখুন না অন্য কোনো পন্থা ব্যবহার করে যা শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে। 

Friday, 21 June 2019

আপনার বাচ্ছা কি খুব জেদী ? আপনার কি করা উচিত

                                 
                                   তিন্নির বয়স 4 বছর হবে , কিছুদিন যাবৎ ওর রাগ এবং জেদ অত্যন্ত বেড়েছে। ও যখন যা চাইবে দিতে হবে , না দিলে চেঁচামেচি করা , মা কে মারা , হাতের সামনে যা পাবে সেটাকে ভেঙে বা ছিঁড়ে ফেলা - এই সব করছে । বাবা মা ওকে নিয়ে খুব ই চিন্তিত।
                                    এই ছবিটি আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে । বাচ্ছার রাগ , বদমেজাজ , জেদ সব যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সব বাবা মা ই কম বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কিভাবে তাঁরা সামলাবেন এই ভেবে ভেবে । কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা শিশুকে মারছেন , বকাবকি করছেন; আবার কিছু ক্ষেত্রে তাদের অযৌক্তিক চাহিদা পূরণ করে ভাবছেন পরিস্থিতি control করবেন । কিন্তু , হচ্ছে না কোনোটাই। উল্টে বাচ্ছা আরো জেদী হয়ে যাচ্ছে আর তার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে ।

বাচ্চার অতিরিক্ত জেদের কারণ :-
                                      প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে জেদী বাচ্ছা আমরা কাকে বলবো । বায়না , কান্নাকাটি , কোনো জিনিস চাওয়া এগুলো মোটামুটি সব বাচ্ছা ই কম বেশি করে থাকে । জেদী বাচ্ছা আমরা তাদেরকেই বলবো যারা কোনো বায়না করে এবং না দেওয়া পর্যন্ত অনাকাঙ্খিত ব্যবহার করে যেমন - খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া , চেঁচামেচি করা , ঘ্যান ঘ্যান করা , মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া , মা কে মারা ইত্যাদি ।
এই অতিরিক্ত জেদের সম্ভাব্য কিছু কারণ হল -
1. এইসব শিশুদের বাবা মা এর মধ্যে সদ্ভাব এর অভাব ।
2. বাবা মা অথবা Primary Care Giver  এর মানসিক সমস্যা ।
3. শিশুর প্রতি বাবা মা এর অসংগত আচরণ যেমন একই আচরণের জন্য বাবা যখন উৎসাহ দিচ্ছেন তখন মা হয়তো শিশু কে শাস্তি দিচ্ছেন এবং নিরুৎসাহ করছেন। এতে শিশুর মনে ওই আচরণ ঠিক না ভুল এই সম্পর্কে দ্বন্দ তৈরী হয়।
4. শিশুকে quality time দিতে না পারা। হয়তো বাবা মা দুজনেই চাকরি করেন বা ব্যস্ত থাকেন।
5. আজকে প্রায় সব পরিবার ই নিউক্লিয়াস ফ্যামিলি অর্থাৎ পরিবারে সদস্য সংখ্যা কম , ফলে শিশুর একাকীত্ব বোধ বৃদ্ধি।
6. খেলাধুলো র পরিমান কমে যাওয়া এবং বেশির ভাগ সময়ে মোবাইল টিভি ভিডিও গেমস ইত্যাদি তে ব্যস্ত থাকা। ফলে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে।


জেদী শিশু সামলানোর জন্য কি কি করণীয় :-
                               এই সমস্যার কারণ যেমন বহুমুখী ,সেইরকম এই সমস্যা সমাধান করতেও বহুমুখী পন্থা অবলম্বন করতে হতে পারে । প্রতিটি শিশু র সমস্যা , লক্ষণ , কারণ এগুলির ওপর নির্ভর করবে তাকে সামলানোর পদ্ধতি। Individual treatment procedure for each individual Children.

1. বাচ্ছার জেদ সামলানোর জন্যে বাবা মা তাকে প্রশ্রয় দেন এবং সে যেটা চাইছে সেটা সাথে সাথেই দিয়ে দেন। এটি ভুল পদক্ষেপ। এটি বন্ধ করুন।

2.অতিরিক্ত জেদ করলে বাবা মা এর প্রাথমিক ভাবে মনোযোগ না দেওয়া উচিত এবং বকা দেওয়া , শিশু কে মারা এসব না করে উচিত ।

3.একবার জেদ করেই কোনো জিনিস পেয়ে গেলে শিশুর একটা Learning বা শিক্ষা হয়ে যায় যে কান্নাকাটি করলেই সে সব কিছু আদায় করে নিতে পারবে। ভবিষ্যতে এই স্বভাব এবং চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়বে এবং যখন বাবা মা সেটা দিতে পারবে না শিশু আরো অন্য রকম পন্থা প্রয়োগ করবে সেটা আদায় করার। তাকে বোঝাতে হবে যে যখন যেটা চাইবে সেটা সব সময় পাওয়া নাও যেতে পারে ।

4. শৈশব থেকেই শিশুর মানিয়ে নেবার ক্ষমতা বাড়াতে হবে । নানান বিষয় কে সহজ ভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা তৈরী করতে হবে। এই সমস্ত প্রতিকূলতায় পরবর্তী জীবনে তার বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

5. শিশুর প্রতি বাবা মা এর আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কোনো জেদী শিশু কে বাইরে নিয়ে যাবার আগে তাকে আগে থেকে বলে নিয়ে যেতে হবে যে দোকানে গিয়ে তুমি কিছু চাইবে না অথবা নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের বাইরে তুমি কিছু বায়না করবে না । যদি সে এই কথা মতো কাজ করে তাহলে তার প্রসংশা করুন। এটিকে বলে Reward বা Positive Behaviour. এই প্রশংসা পেলে শিশু খুব খুশি হবে এবং তার মধ্যে positive learning তৈরী হবে এবং এই আচরণ সে ভবিষ্যতেও প্রদর্শন করবে ।

কিন্তু যদি জেদী বাচ্ছা বায়না করে এবং অনাকাঙ্খিত ব্যবহার করে তখন তাকে অবশ্যই কিছু punishment দিতে হবে , যেমন -
● তার কিছু সুযোগ সুবিধা প্রত্যাহার করা - টিভি দেখতে না দেওয়া ইত্যাদি।
● তার সাথে কথা বলা প্রত্যাহার করা
● তাকে আদর করা কমিয়ে দেওয়া
● তার সত্যে উষ্ণতা কমিয়ে দেওয়া - যেমন স্কুল থেকে আসলে আগে যেমন মা  তার বাচ্ছা কে জড়িয়ে আদর করতো এখন আর করবে না ইত্যাদি।
● আদর করে শিশু কে ডাকা বা আদরের নামে শিশুকে ডাকা কমিয়ে দেওয়া
● উপহার দেওয়া কমিয়ে দেওয়া

বাবা মা এর এই নতুন ব্যবহারের ফলে শিশু বুঝতে পারবে যে তার কিছু ভুল আচরণের জন্য বাবা মা তাকে আদর করা , ভালোবাসা কমিয়ে দিয়েছে । ফলে সে ভবিষ্যতে সেই ভুল আচরণ গুলি আর করবে না।

6. বাচ্ছা কে False Statement দেবেন না অর্থাৎ এমন কিছু বলবেন না যেটা করে দেখতে পারবেন না। যেটা করে দেখাতে পারবেন সেটাই বলবেন। হয়তো বললেন তুমি বদমাইশি করলে তোমার খাওয়া বন্ধ করে দেবো। কিন্তু আদৌ সেটা করা সম্ভব নয় বা করলেন না । তখন শিশুর আপনার প্রতি বিশ্বাস যোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে আপনি শুধু ভয় দেখানোর জন্য এটি বলেছিলেন । ফলত আপনার প্রতি তার ভয় , সমীহ , সন্মান কমে যাবে এবং সে তার জেদ বা tempar-tantrum বজায় রাখবে ।

7. বাচ্ছাকে কি কি করবেন না -
● বাইরের লোকের সামনে বাচ্ছার সমালোচনা করবেন না
● বাচ্ছাকে খুব বেশি বকবেন না
● গায়ে হাত দেওয়া উচিত নয় ।
● পরিবারের সব সদস্য যেন একমত রাখেন। বাবা মা বকছেন আর দাদু দিদা প্রশ্রয় দিচ্ছে - এমন যেন না হয়।
 এগুলি করলে কিছু অপকারিতা হতে পারে -
● বাচ্ছা এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং পাত্তা দেবে না
● বকা দেবার উপকারিতা কমে যাবে
● বাচ্ছা কে সকালে বকলেন , খেতে দিলেন না আবার বিকেলেই নিজেই থাকতে না পেরে আদর করলেন , লজেন্স বা চকোলেট দিলেন এটা একদম ই উচিত নয় । এতে সে শিখবে যে ছোট খাটো অপরাধে ক্ষতি তো হয়ই না উল্টে কিছু সময়ে লাভ হয়।

                                কোনো শিশুই জেদী হয়ে জন্মায় না। বাচ্ছা বড় হতে হতে দুষ্টুমি শেখে। ফলে তাকে সেই রকম পরিবেশ দিন যেটা তার Positive Learning এ সাহায্য করবে । বাচ্ছার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলুন , তাকে request করতে সেখান। চাহিদা প্রকাশ কখন করবে ও কখন self control করবে সেই সম্পর্কেও তাকে অবগত করুন। প্রয়োজন হলে অবশ্যই Child Psychologist বা Psychologist এর সাথে পরামর্শ করুন ।

Saturday, 8 June 2019

Obsessive Compulsive Disorder বা শুচি বায়ু রোগ

                                     

                           পরিমল একজন ব্যাংকের কর্মী , হটাৎ করে একদিন তার মনে হলো কাস্টমার এর থেকে নেওয়া টাকা 3 বার না গুনলে তার হিসেবে ভুল হয়ে যাবে। Machine এ টাকা গোনার পরেও তাকে 3 বার গুনতেই হবে। এর মধ্যে যদি মনে হয় ভুল হয়েছে তাহলে আরো 3 বার গোনা শুরু করলো । কাস্টমার দের দেরি হতে লাগলো এবং ব্যাঙ্ক এর কাজে ব্যাঘাত ঘটা শুরু হলো।

                             কল্পনা দাস, বয়স 30 বছর। তার একটি ছেলে ও মেয়ে আছে। তার ধারণা কুকুর খুব নোংরা প্রাণী, যা ছোঁবে নোংরা হয়ে যাবে। মেয়ে কে স্কুল থেকে আনতে যাবেন রাস্তায় সামনে একটু কুকুর দেখলেন , সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি ফিরে এসে স্নান করতে চলে গেলে। তার ধারণা ওই কুকুর এর নোংরা তার গায়ে লেগে গেছে। ওনার স্বামী এবং ছেলে মেয়েরা অফিস এবং স্কুল থেকে ফিরলে জামা কাপড় না ধুয়ে ঘরে ঢুকতে পারবেনা। উনি নিজেও এখন ঘন্টার পর ঘন্টা বাথরুম এ কাটান , অনেক বার স্নান করেন ও পরিষ্কার করেন এবং প্রচুর জল ও সাবান নষ্ট করছেন।

                              উপরের দুটি ঘটনা আমাদের আসে পাশে অনেক মানুষের মধ্যেই ঘটে থাকে। অনেক সময় আমরা জানতে পারি অনেক সময় আমরা জানতে পারি না।
এই রোগের নাম Obsessive Compulsive Disorder (OCD) বা শুচি বায়ু রোগ।
                                বারবার একই চিন্তা রোগীর মাথায় আসে । একই ধারণা বা কল্পনা ঘুরে ফিরে রোগীর মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। রোগীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই চিন্তা বারংবার আসে। রোগী নিজেও বুঝতে পারে এই সমস্ত অপ্রয়োজনীয় , মন থেকে তাড়াতে চাইলেও তাড়াতে পারেনা। এটাকেই বলা হয় Obsession । এই obsession মনের মধ্যে সাংঘাতিক Anxiety বা discomfort সৃষ্টি করে । রোগী চাইলেও এই চিন্তা মাথা থেকে দূর করতে পারেনা।
                                  OCD রোগের প্রথম component হলো Obsession এবং দ্বিতীয় component হলো Compulsion . এটির অর্থ হলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটা কাজ রোগীকে বার বার করে যেতে হয়। যেমন বার বার হাত ধোয়া , কোনো কিছু বারবার গোনা ইত্যাদি। Obsessive চিন্তা গুলিকে দূর করতে রোগীর Active effort থাকে। ওই চিন্তা গুলি থেকে মনের মধ্যে যে উৎকন্ঠা বা অস্থিরতা তৈরী হয় তাকে প্রশমিত করতেই রোগী বারবার Compulsive কাজ গুলি করে। এক ই চিন্তা বারবার আসা এবং সেই চিন্তা দূর করার জন্যে কিছু কাজ বার বার করা - এই repetitive cycle বা চক্রের মধ্যে রোগী পরে যায় এবং এখন থেকে বেরোতে পারেনা। এতে রোগীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।

OCD সংক্রান্ত কিছু লক্ষণ - 

1. প্রয়োজন ছাড়াই এক এ কাজ বারবার করা।
2. বারবার হাত ধোয়া , বারবার স্নান করা , বারবার চেক করা , বারবার গোনা বা Counting করা , বারবার ঈশ্বরের প্রার্থনা করা ইত্যাদি।
3. একটি নিৰ্দিষ্ট নিয়মে কোনো কাজ বারবার করা যেমন -  3 বার বা 5 বার কোনো কিছু গোনা বা ধোয়া ; একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি।
4. অনেক খারাপ চিন্তাও এই রোগ এ আস্তে পারে যেমন পরিবারের কারুর ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে বা রোগী নিজে পরিবারের কারুর ক্ষতি করে দিচ্ছে । যেমন ছুরি দেখলেই সে ভাবে যে সে অন্য কাউকে আঘাত করে দেবে।
5. কিছু ধর্মীয় চিন্তাও এই সমস্ত রোগীর মধ্যে দেখা যায়। যেমন - ভগবান সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা যেটা তার স্বাভাবিক বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এই ত্রুটিপূর্ণ চিন্তার জন্যেই রোগীর মনের মধ্যে Guilt Feeling  তৈরী হয়। যার ফলস্বরূপ রোগী বারবার ওই Compulsive কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে । তাই রোগী বারবার এবং অনেক্ষন ধরে পুজো অর্চনা করে এই সব চিন্তা থেকে মুক্ত হবার জন্যে।

                                               



OCD এর কারণ - 
OCD একটি multifactorial disease অর্থাৎ অনেক গুলি কারণ একসাথে এই রোগের সৃষ্টি করে থাকে বলে মনে করা হয়। Biological , Social বাবা সামাজিক এবং Psychological বা মানসিক এই তিনটি ক্ষেত্র OCD সৃষ্টির কারণ বলে বলে ধরা যেতে পারে ।

●Biological - কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে বংশগত কারণ বা Genetic Cause এর পেছনে থাকতে পারে। এছাড়া মস্তিষ্কের কিছু chemical যেমন neurotransmitter এর পরিমানের তারতম্য ঘটলেও OCD দেখা দিতে পারে ,যেমন Serotonin এর তারতম্য ঘটলে। যদিও এই বিষয়ে এখন ও যথেষ্ট গবেষণার প্রয়োজন আছে।

● Psychological - ফ্রয়েড এর থিওরি অনুযায়ী repressed বা অবদমিত অসামাজিক বৃত্তি গুলি যখন অবদমনের বাধা কে অতিক্রম করে আমাদের Conscious মনে বেরিয়ে আসতে চায় তখন কিছু মানসিক প্রতিক্রিয়া  তাদের বাধা দেয় যাতে ওই মানসিক বৃত্তি গুলি নিজের স্বরূপ প্রকাশ করতে না পারে। তখন ই বিভিন্ন compulsive কাজ সৃষ্টি হয়। উদাহরণ দিয়ে বোঝালে সুবিধা হবে -
একজন রুগী বার বার দোকানের তালা ছুঁয়ে নমস্কার করছে ।কিছুতেই সে এটা বন্ধ করতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে সে চলে গেলেই তার বাবার শরীর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাবে তাই তক্ষুনি সে তালা ছেয়ে নমস্কার করছে।
মনঃসমীক্ষায় দেখা গেছে যে , Unconscious মনে সেই ছেলেটি বাবার মৃত্যুচিন্তা বাবা শরীর অসুস্থতার কথা স্বীকার করতে পারছে না , অথচ এই চিন্তা কে সে দমিয়ে রাখতেও পারছে না; তখনই সে তালা ছোঁয়া এবং নমস্কার করার মতন Compulsive কাজ করে ওই পীড়াদায়ক চিন্তার মোকাবিলা করছে। এই ক্রিয়া কে বলা হয় Undoing ।
এছাড়াও মনোবিজ্ঞানীরা এই রোগের কারণ হিসেবে শৈশবে মনোবিকাশের  একটি বিশেষ stage এ অসামঞ্জস্যতা কে দায়ী করেছেন। ফ্রয়েড এর থিওরি অনুযায়ী Psychosexual Stages of Personality Development এর Anal Stage এ যখন শিশুর বয়স দেড় থেকে 3 বছর তখন সে ইচ্ছাকৃত মলমূত্র ত্যাগ অথবা বন্ধ করার শক্তি প্রথম অর্জন করে। এই stage এ নির্ভর করে শিশুর Character traits কেমন হবে। Authoritative বা Strict Parenting হলে এই stage এ শিশু fixed হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে  OCD হবার সম্ভাবনাও তৈরী হয়ে যায়।

এই রোগটি কখন বা কাদের হতে পারে -
যে কোনো বয়সেই এই রোগটি হতে পারে তবুও মুখ্য ভাবে adolescence age এই বেশি এই রোগের প্রভাব দেখা যায়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটেই এই রোগটি হতে পারে।

চিকিৎসা -
চিকিৎসা মূলত দুই রকমের হয় - ওষুধের মাধ্যমে বা Medication এবং Psychotherapy.

ওষুধের মাধ্যমে - 
 Modern Medicine এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাাকে। মূলত Psychiatrist ডাক্তার বাবুরাই treatment করেন ।

হোমিওপ্যাথি তেও OCD এর চিকিৎসা সম্ভব এবং চিকিৎসা হয়ে থাকে থাকে। সাধারণ মানুষ অনেকেই জানেন না। সঠিক AntiMiasmatic and Constituitional Homoeopathic treatment করলে এই রোগ আরোগ্য সম্ভব।

Psychotherapy -
OCD চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো  Psychotherapy . মনোবিদ বা Psychologist , Psychological Counsellor , Psychiatrist এনারাই psychotherapy দিয়ে থাকেন।
মূলত 4 ধরনের therapy দেওয়া হয় , কাকে কি দেওয়া হবে এটি পুরোপুরো প্রতিটি রুগীর ক্ষেত্রে আলাদা এবং লক্ষণ ও Clinical Condition অনুযায়ী ঠিক করা হয়।
a. Cognitive Behaviour Therapy
b. Behaviour Therapy -
◆Exposure and Response Prevention
◆Desensitization & Flooding
◆Thought Stop

c.Supportive Psychotherapy
d. Psychoanalytical Therapy

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে -
★ রোগীর জীবনে OCD আসার পর জীবনে ছন্দপতন ঘটে। রোগীরা সাধারণত এটি নিজেরাই মানে পারেন না। এই রোগে সুস্থ্য হবার প্রথম শর্তই হলো ACCEPTANCE অর্থাৎ রুগীকে মেনে নিতে হবে আমার একটি রোগ হয়েছে এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী ।

★ শুধু রুগী নয় , তার বাড়ির সদস্য দের ও মেনে নিতে হবে বা accept করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে পরিবারের সদস্য রা ভাবে রুগী বোধহয় ইচ্ছে করেই ওই রকম আচরণ করছে এবং চাইলেই সে এইগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা অতিরিক্তবার বাথরুম ব্যবহার করেন এবং বাথরুম আটকে রেখে দেন , পতিরিক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং hygiene maintain এর জন্যে কাউকে ঘরে ঢুকে দেন না বা নানান রকম নিয়ম চালু করে দেন এবং অন্যের ওপর ও এই সব শর্ত চাপিয়ে দেন।ফলে বাড়ির সদস্যরা রুগীর ওপর রেগে যান বা বিরক্ত হয়ে যান। কিন্তু মনে রাখতে হবে উনি একটি রোগ এ আক্রান্ত এবং ওনাকে সুস্থ্য করে তুলতে Family Support খুব ই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

★  রোগ সম্পর্কে রোগী এবং তার পরিবারকে যথেষ্ট ধারণা প্রদান করতে হবে চিকিৎসককে।

★ রোগের লক্ষণ গুলি মাঝে মাঝে কমে মাঝে মাঝে বাড়ে , ফলে রোগীকে এই গুলি মাথায় রাখতে হবে ।

★ OCD একটি মৃদু মানসিক রোগ , এটি খুব কষ্টকর কিন্তু রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। তার সামাজিক , পেশাগত এবং সাংসারিক ও দাম্পত্য জীবন যাপন করতে অসুবিধা হয়না।

         

Monday, 3 June 2019

আপনি কি মানসিক ভাবে সুস্থ্য ?


                                         
   
                           World Health Organization বা WHO এর সংজ্ঞা অনুযায়ী Health বা স্বাস্থ্য মানে শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয় ; স্বাস্থ্য মানে শারীরিক , মানসিক ও সামাজিক দিক থেকে একজন মানুষের কল্যাণ বোধকে বোঝায়। এই তিন দিক থেকেই সুস্থ্য থাকাকে বজায়। এই তিনটি ক্ষেত্রের যেকোনো একটিও ব্যাহত হলেই একজন মানুষ অসুস্থ্য হতে পারেন ।

                             মানসিক স্বাস্থ্যও এর ব্যাতিক্রম নয়। মানসিক স্বাস্থ্য সামান্য ব্যাহত হলেও মানুষ অসুস্থ্য হতে পারেন। আমরা অনেক সময় বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে পরে সল্প সময়ের জন্যে মানসিক লক্ষণ প্রদর্শন করি , আবার সেই পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে সেই সব লক্ষণ ও চলে যায়। যেমন উদাহরণ সরূপ বলতে পারি - প্রিয়জনের বিয়োগে দুঃখ এবং মানসিক কষ্ট পাওয়া ; পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর সময় পরীক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা ইত্যাদি । এগুলি সব এ সাময়িক এবং কোনোরকম সুদূর প্রসারী প্রভাব বিস্তার না করেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এগুলি চলে যায় ।
                     
                              মানসিক রোগী এবং সুস্থ্য মানুষ এই দুই এর মাঝে কিছু মানুষ থাকেন যাদের মানসিক রোগের প্রবণতা থাকে । এই প্রবণতা গুলি তাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন ভাবেই মিশে থাকে যে এগুলিকে অস্বাভাবিক গণ্য করে এর প্রতিকার করার চেষ্টা করা হয় না। কিছু স্বভাব ,কিছু মানসিকতা , কিছু আচরণ দ্বারা এই গুলি নিজেদের প্রদর্শন করলেও সঠিক সচেতনতার অভাব থাকায় এর কোনো প্রতিকার করা হয় না , উল্টে কিছু ক্ষেত্রে চরম অবহেলা ও ব্যাঙ্গ করা হয়।
   
                               এই রকম কিছু মানসিক প্রবণতার কথা আমরা এখন আলোচনা করবো -

1. 28 বছরের অরিত্র। একটি মোবাইলের দোকান আছে তার। রাত্রে দোকান বন্ধ করার সময় 3 টি তালা 2-3 বার টেনে দেখে নেয় ঠিক থাক বন্ধ হয়েছে কি না। ইদানিং সে গুনে গুনে 10 বার 3 টি তালা টেনে দেখে, মাঝপথে গুনতে ভুলে গেলে আবার প্রথম থেকে গোনে । এখন তার তালা গুনতে আধ ঘন্টা লেগে যাচ্ছে , সে হাপিয়ে যাচ্ছে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সে এটা না করে যেতেও পারছে না।

2. তারক বাবুর বয়স 65 বছর । এআস্ত্রী , পুত্র, বৌমা ও নাতি নিয়ে ভরা সংসার। খুব গল্প করতে ভালো বাসেন । ইদানিং সবসময় বিরক্ত হয়ে থাকেন। স্ত্রী এর সাথে বেশি কথা বলেন না , নাতির সাথেও খেলেন না। সিনেমা , TV দেখতে ভালোবাসতেন। এখন এসব করেন না , বেশির ভাগ সময় শুয়ে শুয়ে কাটান আর কারুর সাথে গল্প করেন না। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই বলেন তার ভালো লাগছে না।

3. কল্পনা গোস্বামী, বয়স 68 বছর । সারাদিন তার একটাই কাজ ঘর পোঁছা । বাড়িতে কেউ এলে তাকে ঘরে ডাকতে চান না , কারণ বাইরের কেউ যে ঘরে আসবে বা যা যা ছোঁবে সেগুলো সব তাকে আবার ধুতে হবে। এমন কি কেউ কলিং বেল বাজলেও সেটাও কাপড় জলে ভিজিয়ে পরিষ্কারর করেন ।

4. শুক্লা ঘোষ বয়স 35 বছর । বিয়ে করেননি , টিউশনি করেন। উনি টাকা ধুয়ে তবে সেটা বাড়িতে রাখেন। বাজার করেই হোক আর ব্যাঙ্ক থেকেই হোক যে কোনো টাকা উনি দিয়ে ব্যবহার করেন। ওনার ধারণা টাকা অনেক মানুষের হাতে ঘোরে , তাই জীবাণু থাকবেই এবং শরীর খারাপ করতেই পারে না ধুয়ে ব্যবহার করলে।

5. কমলেশ্বর বাবুর আজ বহু বছর হয়ে গেল অফিস থেকে ফিরে একটাই অভ্যাস , জামা কাপড় থেকে শুরু করে টাকা পয়সা , অফিস এর ব্যাগ ও জলে চুবিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নাহলে ওনার স্ত্রী ঘরে ঢুকতে দেবেন না। বাজার করে ফেরার পর সব সবজি , মাছ মাংস এমন কি খবরের কাগজও ধুয়ে নিতে হয়। ওনারা প্যাকেট দুধ খান কেননা ওটা ধোয়া যাবে, গোয়ালার দুধ ধোয়া না।

6. একজন মহিলা , গ্রামের দিকে বাড়ি। উনি সারাক্ষন ধূপের গন্ধ পান । সেখানে ধুপ জ্বলছে না অথচ তিনি সারাক্ষন ধূপের গন্ধ পাচ্ছেন এবং ওনার রাগ সীমার বাইরে চলে যায় তখন ওনাকে ধরে বেঁধে রাখা যায় না।

7. মালতী দেবী , বয়স 60 বছর । উনি সবসময় ভাবেন উনি ঠিক বাকি সবাই ভুল । ওনার কেউ ভুল ধরলেই উনি রেগে যান। উনি নিজের অজান্তেই প্রচন্ড মিথ্যে কথা বলেন এবং নিজেকে victim বানিয়ে অন্যের সহানুভূতি প্রত্যাশা করেন। এই সমস্ত আচরণের জন্যে ওনার বাড়ির পরিস্থিতি খুব ই সমস্যাজনক ।

8. অনিক , বয়স 14 বছর। প্রচন্ড মিথ্যে কথা বলে , মারপিট করে। স্কুলে ,  বাড়িতে এবং আত্মীয়ের বাড়িতে একাধিক বার চুরি করে ধরা পড়েছে। অন্য লোকের ক্ষতি করে যেমন স্কুল এ বা পাড়ায় । বাড়ির লোকেরা অনেক বুঝিয়েছে , মারধর করেছে কিন্তু সে শোধরায়নি।

9. রাজেশ , বয়স 21 বছর , বাবা মারা যাওয়ায় রেল এ চাকরি পেয়েছে । কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবার । কাজে যেতে তার মন নেই , মনে খুশি ,মুখে হাসি নেই। কোনো কিছুতেই তার আগ্রহ নেই। ঘুম , খিদে একদম কমে গেছে। , সবসময় বিরক্তভাব। তার মনে হয় সে চাকরি ছেড়ে দেবে নাহলে রেল লাইনে আত্মহত্যা করবে।

10. মীরা , বয়স 17 বছর। উচ্চমাধ্যমিক দেবে। ডাক্তার হবার খুব ইচ্ছে । দিন কয়েক হলো সে এক এক পড়তে যেতে ভয় পাচ্ছে , মা কে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির দোতলায় এক থাকলে তার ভয় হচ্ছে , বুক ধড়ফড় করছে , প্রচন্ড ঘেমে যাচ্ছে।

                              উপরের ঘটনা গুলি আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই দেখেছি । কিন্তু এগুলি কোনো মানসিক রোগের পূর্বাভাস তা আমরা বুঝতে পারিনি। ফল স্বরূপ এই মানুষ গুলির কোনো চিকিৎসা হয়নি এবং তারা এক অসহনীয় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

                              উপরের বিবরণ গুলি যে রোগের মধ্যে পড়তে পারে সেটি হলো -
1,3 ,4 এবং 5 নম্বর OCD বা অবসেসসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার
2 নম্বর - অবসাদ বা ডিপ্রেশন
6 নম্বর  - হ্যালুসিনেশান ( এটি Schizophrenia বা Mood Disorder এ দেখা যায়)
7 নম্বর  - Personality disorder or Mood disorder
8 নম্বর  - অপরাধ প্রবণ মানসিকতা ( এটিও একধরণের Personality Disorder)
9 নম্বর  - অবসাদ বা ডিপ্রেশন
10 নম্বর  - আতঙ্ক বা ফোবিয়া (Phobia)  ।

                                  উপরের কেস গুলি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । আমাদের চারপাশে এই রকম আরো অনেক মানসিক রোগের লক্ষণ বা পূর্ব লক্ষণ আমরা দেখতে পাই । কিন্তু আমাদের সচেতনতার অভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি না । এনারা হয়তো একটু সামান্য সাহায্য পেলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।
           
                                  এই রকম কোনো সমস্যা আপনার আশেপাশে দেখলেই তাকে ডাক্তার বাবুর কাছে নিয়ে যান বা যাবার পরামর্শ দিন এবং ডাক্তার বাবু কে সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বলুন ।

                                   আপনি এই আর্টিকেল টি পরে যদি মনে করেন আপনার এই রকম কোনো সমস্যা আছে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করুন ।

                 সচেতনতা এবং সহমর্মিতা দিয়ে আমাদের এক মানসিক ভাবে সুস্থ্য সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করুন ।